মোঃ তাহেরুল ইসলাম,নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর সভায় গরু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য তিনটি হাট বিখ্যাত। সোনারায় ইউনিয়নে বসুনিয়ার হাট, গোমনাতি ইউানিয়নের আমবাড়ীর হাট এবং বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের বোড়াগাড়ীর হাট। সপ্তাহে হাট গুলো দুদিন করে বসে। বসুনিয়ার হাট(শুক্রবার-সোমবার), আমবাড়ীর হাট( শুক্রবার-মঙ্গলবার) ও বোড়াগাড়ী হাট(শনিবার-মঙ্গলবার)।
ঈদুল আযহাকে পুজি করে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তিনটি হাট ইজারাদারের বিরুদ্ধে। সরকারী ভাবে গরু প্রতি ২১০ টাকা টোল আদায়ের নিয়ম থাকলে মানছেন না হাট ইজারাদার মালিক পক্ষ। বসুনিয়া ও বোড়াগাড়ীর হাটে গরু ক্রেতা-বিক্রেতার কাজ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৮শ টাকা। কিন্তু এই দুটি হাটের চেয়ে ১শ টাকা কম নিচ্ছে আমবাড়ী হাট।
মঙ্গলবার (৫জুলাই) আমবাড়ী ও বোড়াগাড়ী হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে আদায় করছে অতিরিক্ত টোল। বোড়াগাড়ী হাটে ক্রেতাার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩শত ও বিক্রেতার কাজ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫শত টাকা। বসুনিয়া ও বোড়াগাড়ীর হাটের চেয়ে ১শত টাকা কম টোল আদায় করছে আমবাড়ী হাট ইজারাদার ওসমান আলী। সেখানে ক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২শত ও বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫শত টাকা। সরকারী ভাবে গরু ২১০টাকা, মহিষ ২১০টাকা, ছাগল ৯০টাকা,বাইসাইকেল ৪৫টাকা নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তারা চারগুন টোল বেশী আদায় করা হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে। সরকারী নিয়ম তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
গত শুক্রবার দুপুরে বসুনিয়ার হাটে গিয়ে দেখাযায়, ক্রেতার কাছ থেকে ৬শ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ২শত টাকায় আদায় করছেন রশিদ লেখকরা। তবে রশিদে কোন টাকা উল্লেখ করছেন তারা। নাম প্রকাশে অনেকছুক এক রশিদ লেখক বলেন হাট ইজারাদার আমাদের যে বলেছে আমরা সেই হিসাবে টোল আদায় করছি।
বসুনিয়া হাটে গরু কিনতে আসা আরাফাত হোসেন জানান, আমি একটি গরু কিনেছি, আমাকে ৬শ টাকা টোল দিতে হয়েছে এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ২শ টাকা নিয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে মোট ৮শত টাকা আদায় করে হাট ইজারাদার। এটি একটি অমানবিক কাজ।
বসুনিয়ার হাটে আসা ডোমারের গরু ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন খামার হতে কিংবা বাড়ী বাড়ী থেকে গরু কিনে হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করি। অন্যান্য হাটের চেয়ে এখানে বেশী টোল নেওয়া হচ্ছে। এভাবে বেশী টোল আদায় করলে এই হাটে গরু নিয়ে এসে বিক্রি করা সম্ভব নয়। গত মাসে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ ৬শ টাকা টোল নিলেও বর্তমান মাসে আরো ২শত টাকা বেশী নিচ্ছেন তারা। হাটে গরুর আমদানী অনেক, সেই হিসেবে বিক্রি কম। আমি দুটি গরু বিক্রি করেছি সিমিত লাভে। কিন্তু আমাকে টোল দিতে হলো ২শত করে ৪শত টাকা। আর আমি যার কাছে বিক্রি করেছি ওনাদের কাছ থেকে ২টি গরুতে নেওয়া হয়েছে ৬শত করে ১২শ টাকা।
এদিকে বসুনিয়ার হাটে অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে সোনারায় ইউনিয়নের ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ৩ জুলাই নীলফামারী জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, সরকার নির্ধারিত টোল ফি গরু ২১০টাকা। কিন্তু হাট ইজারাদার হাট পাওয়ার পর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে ৬শত টাকা করে নিচ্ছে। এখন আরো ২শত টাকা বাড়িয়ে ৮শত টাকা নিচ্ছে। যাহা সাধারণ মানুষের প্রতি অন্যায় অবিচার করা হচ্ছে। অতিরিক্ত টোল আদায় থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে হাটগুলোতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। হাটে সরকার নির্ধারিত টোল ফি চার্ট টাঙ্গানোর দ্রুত বাস্তবায়ণের দাবী জানাচ্ছি।
বসুনিয়া হাট ইজারাদার মাহমুদ হাসান হাটে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়ে। ফোন দিলে রিসিভ না করায় অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আমবাড়ী হাটের ইজারাদার ওসমান আলী বলেন, ঈদ উপলক্ষে টোল বাড়ানো হয়েছে। বোড়াগাড়ী ও বসুনিয়ার হাট আমাদের চেয়ে ১শত টাকা বেশী নিচ্ছে।
সোনারায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফিরোজ চৌধুরী বলেন, বসুনিয়ার হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে ৮শত টাকা টোল আদায়ের কথা জেনেছি। আমি কয়েক বার ইজারাদারকে সরকার নির্ধারিত টোল ফি নেওয়ার কথা বলি। কিন্তু ইজারাদার আমাদের কারো কথা শুনছে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রমিজ আলম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।